২রা মার্চ ২০২৫
রমজান আত্মশুদ্ধি, সংযম ও ইবাদতের মহিমান্বিত মাস

রমজান ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম। বিশ্বের মুসলমানদের জন্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ একটি মাস। এটি চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে হিজরি মাসের নবম মাস হিসেবে পালিত হয়। এ মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক সক্ষম মুসলমানের জন্য ফরজ করা হয়েছে, যা মানুষকে সংযম, ধৈর্য ও আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দেয়।
এই মাসে আল-কোরআন নাজিল হয়েছে, যা মানবজাতির জন্য সর্বোত্তম দিকনির্দেশনা। قال رسول الله : مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا، غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ (২০১৪صحيح البخاري، حديث رقم
রসুল সা. বলেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে এবং সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখে, তার পূর্বের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং ২০১৪)
এ মাসে শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়, জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এটি মুসলমানদের আত্মশুদ্ধির, ইবাদত-বন্দেগি এবং গুনাহ থেকে মুক্তির শ্রেষ্ঠ সময়। রমজান আমার জীবনের একটি অনন্য অভিজ্ঞতার মাস। প্রতিবার এই মাস আসলে আমি নতুনভাবে নিজেকে গড়ে তোলার সুযোগ পাই। সারাদিন রোজা রেখে যখন সন্ধ্যায় ইফতার করি, তখন এক অপার আনন্দ অনুভব করি। ক্ষুধার্ত অবস্থায় দরিদ্রদের কথা মনে পড়ে, যা আমাকে আরও সহানুভূতিশীল করে তোলে।
রমজান আত্মসংযমের শিক্ষা দেয়। এটি শুধু খাবার বা পানীয় থেকে বিরত থাকার মাস নয়, বরং মনকে শুদ্ধ করার মাস। মিথ্যা, গিবত, রাগ, অহংকার—এসব থেকে মুক্ত থাকার চেষ্টা করি। নামাজে মনোযোগ বাড়াই, কুরআন তিলাওয়াতের পরিমাণ বাড়াই।
রমজানের বিশেষ মুহূর্তগুলোর মধ্যে তারাবিহ নামাজ, সেহরি, ইফতার এবং শেষ দশকের ইতিকাফ আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। লাইলাতুল কদরের রাতগুলোর বিশেষ ইবাদতের অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। এই মাস আমাকে আল্লাহর আরও কাছাকাছি নিয়ে যায় এবং জীবনের সঠিক দিকনির্দেশনা খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
রোজা মানুষকে ধৈর্যশীল ও সহানুভূতিশীল করে তোলে এবং আত্মশুদ্ধির সুযোগ করে দেয়। রোজার মাধ্যমে একজন মুসলমান নিজেকে আল্লাহর নৈকট্যে নিয়ে যেতে পারেন এবং তাকওয়া অর্জন করতে পারেন। কুরআনে বলা হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। (সূরা বাকারা: ১৮৩)
রমজান আত্মশুদ্ধি, সংযম ও ইবাদতের মাস। এ মাসের প্রতিটি মুহূর্ত মূল্যবান, তাই আমাদের উচিত যথাযথভাবে রমজানের আমল ও ইবাদত করা এবং এর শিক্ষাগুলো জীবনে ধারণ করা। রমজানের শিক্ষা কেবল এই মাসেই সীমাবদ্ধ না রেখে সারাবছর জীবনে অনুসরণ করা উচিত। আল্লাহ আমাদের সবাইকে রমজানের পূর্ণ ফজিলত লাভ করার তাওফিক দিন। আমিন।