আল-কুরআনের বৈশিষ্ট্যাবলী

মহান আল্লাহ্ তা'আলা কর্তৃক ওহীর মাধ্যমে প্রেরিত আল—কুরআন সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্মগ্রন্থ। এটা বিভিন্ন বিষয়বস্তুর সমন্বয়ে গঠিত একটি পূর্ণাঙ্গ জ্ঞানকোষ এবং এটাতে সন্নিবেশিত আছে, মানব জীবনের ইহকালীন ও পরকালীন মুক্তির নির্দেশিকা। এ মহাগ্রন্থ পৃথিবীর অন্যান্য ধর্মগ্রন্থের মতো নয়। এর রয়েছে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য। যে বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করছে এটা মানবীয় কোনো ধর্মগ্রন্থ নয়; বরং ঐশী গ্রন্থ বা আল্লাহর কালাম। আল—কুরআনের উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বৈশিষ্ট হলো:

১. কুরআন ঐশী বাণী বা অলৌকিক মহাগ্রন্থ: পৃথিবীতে কুরআন একমাত্র ধর্মগ্রন্থ যা মানব রচিত নয় বা মানুষের জ্ঞান দ্বারা লিখিত নয়। কারণ, এতে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ মানব রচিত বুঝায় যা অবাস্তব। কুরআন আল্লাহ কর্তৃক হযরত জিব্রীল আ.—এর মাধ্যমে শেষনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম—এর নিকট আরবী ভাষায় নাযিলকৃত তাঁর কালাম বা বাণী। চমৎকার সাহিত্যমানে সমৃদ্ধ প্রাঞ্জল ভাষায় কুরআনের বিষয়বস্তু সন্নিবেশিত। নবীজির ভাষার চাইতে উন্নত, কুরআন আজ আরবী সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ।

২. ভাষা ও সাহিত্য অপরিবর্তিত কুরআন একমাত্র গ্রন্থ যার ভাষা ও সাহিত্যমান চৌদ্দশত বৎসর পর্যন্ত পৃথিবীতে অপরিবর্তিত, অবিকৃত অবস্থায় আরবী ভাষা ও সাহিত্যের সর্বোৎকৃষ্ট দলীল ও মাপকাঠি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে স্বীকৃত। তা কিয়ামত পর্যন্ত এমনটিই থাকবে। বিশ্বের অন্যান্য প্রাচীন ধর্মীয় গ্রন্থ, যেমন— ল্যাটিন, হিব্রু, সংস্কৃত, ইংরেজী, চীনা ইত্যাদি ভাষায় রচিত গ্রন্থসমূহ কোন কোন মাতৃভাষা হিসেবে স্বীকৃত তা বোধগম্য নয়। এগুলো পড়তে হলে প্রাচীন সাহিত্য পড়তে হয়। পৃথিবীতে বহুরাষ্ট্র বর্তমানে আরবী ভাষায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে এবং আজকে আরবী ভাষা জাতিসংঘের অন্যতম স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ভাষা।

৩। অবিকৃত ও সংশোধনহীন কুরআনের ভাষা: কুরআনই একমাত্র গ্রন্থ যা আজ পর্যন্ত অবিকৃত এবং একে কোনো কালেই সংশোধন, পরিবর্তন—পরিবর্ধন করতে হয়নি। নিরক্ষর নবীর মুখনিঃসৃত আল—কুরআন বিশ্বের প্রায় শতকোটি মানুষের ধর্মীয় ভাষা। সমগ্র আরব জাতির রাষ্ট্রীয় ভাষা। কুরআনের বদৌলতে আরবী ভাষা অপরিবর্তিত থাকতে পেরেছে এবং প্রত্যেকটি আরব রাষ্ট্র আরবীকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দান করেছে।

৪। কুরআন সর্বাধিক পঠিত গ্রন্থ: কুরআন বিশ্বের বেশি পঠিত গ্রন্থ। এ গ্রন্থের নাম কুরআন—যার শব্দের অর্থ হলো, পাঠ করার বিষয়। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় মুসলমানদেরকে কুরআনের অংশবিশেষ পাঠ করতে হয়। এটা ছাড়া মক্তব মাদরাসায় লক্ষ—লক্ষ ধর্মানুরাগী কুরআন পাঠ করছে। বিশ্বের আর কোনো ধর্মীয় গ্রন্থ এত ব্যাপকভাবে পঠিত হয় না।

৫। কুরআন হুবহু কণ্ঠস্থ করা সম্ভব কুরআন একমাত্র গ্রন্থ যা মানুষ হুবহু কণ্ঠস্থ করতে সক্ষম। এটা 'হিফজ' করার ব্যবস্থা আছে যা কুরআনকে অবিকৃত থাকতে সাহায্য করেছে। বিষয়বস্তুর ধারাবাহিক বর্ণনা সুন্দর ও পরিকল্পিতভাবে কুরআনের ন্যায় না থাকায় অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ মুখস্থ রাখা সম্ভব হয় না। আজ বিশ্বে লক্ষ—লক্ষ মুসলমান কুরআন মুখস্থ করে রেখেছে।

৬। কুরআন মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চিরস্থায়ী মো'জেযা : পূর্ববর্তী সকল নবীগণের মো'জেযা কেবলমাত্র তাদের জীবিত থাকাকালীন সময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলো। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী, তাঁর নবুওয়ত চিরকাল অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে। আল—কুরআন চিরস্থায়ী নবুওয়াতের চিরস্থায়ী মো'জেযা।

৭। কুরআনে আহলে কিতাবের ধর্মের নাম উল্লেখ রয়েছে মহাগ্রন্থ আল— কুরআনে পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবের অনুসারীদের কিতাব ও ধর্মের নামের স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। পরবর্তীকালে তারা কিতাব ও স্বধর্মের নামে পরিবর্তন করলেও আল—কুরআনে তা আদি ও অবিকল রূপে বিদ্যমান রয়েছে।

৮। কুরআন সমগ্র মানব জাতির উদ্দেশ্য প্রেরিত গ্রন্থ আল—কুরআন হচ্ছে সমগ্র মানব জাতির উদ্দেশ্যে প্রেরিত এক মহাগ্রন্থ। যেখানে অবতীর্ণ মুহুর্ত থেকে নিয়ে কিয়ামত পর্যন্ত অনাগত সর্বকালের সকল মানুষের জন্য রয়েছে ইহ ও পরকালীন সফলতার নির্দেশনা।

৯। কুরআন অবতীর্ণ হয় ধাপে ধাপে কুরআন পূর্ণ পুস্তক আকারে অবতীর্ণ হয়নি। আল্লাহর বিধি—বিধিান প্রচারের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, প্রয়োজনীয় হিদায়াত এবং মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) করণীয় পন্থা নির্ধারণের জন্যে জিব্রীল আ.—এর মাধ্যমে সময় ও অবস্থার প্রেক্ষাপটে কুরআন খণ্ড—খণ্ড আয়াত বা বাণীরূপে অবতীর্ণ করা হয়।

১০। কুরআন আজও অবিকৃত অবস্থায় বিদ্যমান: যখন কাগজ, ছাপাখানা, টেপ রেকর্ডার ছিল না, সেই সময় থেকে আজ পর্যন্ত এত বড় গ্রন্থ সারা বিশ্বে অবিকৃত অবস্থায় রয়েছে এর চেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। বিশ্বে এই কুরআনের ব্যাপারে কোনো ভিন্নরূপ চর্চা নেই বা মতভেদ নেই। এ বিষয়ে একটি হরফেরও হেরফের নেই